শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কোরআনে বর্ণিত মুমিনের ৭ বৈশিষ্ট্য

মুফতি সফিউল্লাহ:
ইমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস ও আস্থা। আর ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত সব বিষয় সত্যায়ন করাকে ইমান বলা হয়। ইমান আনয়নকারী ব্যক্তিদের বলা হয় মুমিন।

মুমিন কোনো বংশীয় পরিচয় নয়। মুমিন তাকেই বলা হয়, যে আল্লাহতায়ালা ও তার রাসুল (সা.)-এর ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস এবং রাসুল (সা.)-এর আনীত বিধানগুলোয় কোনো যুক্তি তালাশ না করে মেনে নেয় এবং মহান আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে দুনিয়ার সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মুমিনের পরিচয় বর্ণনা করে বলেছেন, ‘তারাই মুমিন, যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও ধন-সম্পদ দ্বারা লড়াই করে। তারাই সত্যনিষ্ঠ।’ সুরা হুজুরত, আয়াত ১৫

এই দুনিয়ায় সবাই সফলতা চায়। কেউ দুনিয়াবি সফলতার পেছনে ছোটে। আর কেউ আখিরাতের সফলতায় সচেষ্ট হয়। মুমিনের সব কাজ আখিরাতের সফলতা অর্জনের জন্য হওয়াই কাম্য। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা মুমিনুনে সফল মুমিনের সাতটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যারা এই বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে, তারাই সফলকাম। মুমিনের উচিত এসব বৈশিষ্ট্য অর্জনে সচেষ্ট হওয়া।

আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে। যারা তাদের নামাজে আন্তরিকভাবে বিনীত। যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। যারা জাকাত সম্পাদনকারী। যারা নিজ লজ্জাস্থান হেফাজত করে নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাধীন দাসীদের ছাড়া অন্য সবার থেকে, কেননা এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। তবে কেউ এ ছাড়া অন্যকিছু কামনা করলে তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী। যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, যারা নিজেদের নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে, তারাই হলো সেই ওয়ারিশ, যারা জান্নাতুল ফিরদাউসের মিরাস লাভ করবে। তারা তাতে সর্বদা থাকবে। সুরা মুমিনুন, আয়াত ১-১১

উল্লিখিত আয়াতগুলোতে আল্লাহতায়ালা সফল মুমিনের সাতটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন।

এক : যারা তাদের নামাজে আন্তরিকভাবে বিনীত। এখানে আন্তরিকভাবে বিনীত দ্বারা নামাজ খুশু-খুজুর সঙ্গে পড়া উদ্দেশ্য। খুশু-খুজুর ব্যাখ্যায় ইমাম বাগাবি (রহ.) লিখেছেন, ‘নামাজে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও অন্তরকে স্থির রাখা, চক্ষু অবনত রাখা, আওয়াজ অবনমিত করা।’ বান্দা নামাজে আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়। তাই খুশু-খুজু থাকাই কাম্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সিজদারত অবস্থায় বান্দা তার রবের সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হয়।’ (সহিহ মুসলিম) নামাজে ইচ্ছাকৃত কোনো কল্পনা না করা। অন্তরে কোনো খেয়াল এলে, সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আল্লাহ অভিমুখী করা। তিলাওয়াতের অর্থ বুঝে থাকলে তিলাওয়াতের অর্থের দিকে লক্ষ রাখা।

দুই : যারা অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। মুমিনের বিশেষ একটি গুণ হলো, তারা অহেতুক বিষয় থেকে বেঁচে থাকে। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বাগাবি (রহ.) লিখেছেন, এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ‘যারা শিরক, সব ধরনের গুনাহ, অনর্থক কথা এবং কাজ থেকে বেঁচে থাকে।’ হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সুন্দর মুসলিম হওয়ার একটি নিদর্শন হলো, অর্থহীন কাজ ত্যাগ করা।’ তিরমিজি

তিন : যারা জাকাত আদায়ে তৎপর। মুমিনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন সঠিকভাবে জাকাত আদায় করে। ইমাম বাগাবি (রা.) লিখেছেন, ‘এখানে জাকাত দ্বারা আর্থিক জাকাতও উদ্দেশ্য হতে পারে। আবার নেক আমল করাও উদ্দেশ্য হতে পারে।’ জাকাত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। তাই ইমানের দাবি হলো, জাকাত ফরজ হলে জাকাত আদায় করা। জাকাত আদায় না করার ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন সেই সম্পদকে বিষাক্ত সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুপাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত মাল। সহিহ বোখারি

চার : যারা যৌনাঙ্গকে হারাম থেকে হেফাজত করে। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। সে নিজের স্ত্রী ও দাসী ছাড়া অন্য কোনোভাবে যৌন চাহিদা পূরণের পন্থা অবলম্বন করে না। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী অঙ্গ (জবান) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গের (লজ্জাস্থান) সঠিক ব্যবহারের জামানত দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।’ সহিহ বোখারি

পাঁচ ও ছয় : যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। আমানত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা আমানতকে হকদারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ করছেন যে, তোমরা আমানতগুলো তার হকদারকে আদায় করে দেবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত ৫৮) আর মুমিনের পুরো জীবনটাই আল্লাহ এবং তার রাসুলের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আল্লাহতায়ালা অঙ্গীকার পূরণের আদেশ দিয়ে বলেন, ‘আর অঙ্গীকার পূরণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩৪

সাত : যারা নিজেদের নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। সফল মুমিনের সপ্তম বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন নামাজের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করে। অর্থাৎ পাবন্দির সঙ্গে সময়মতো নামাজ আদায় করে। নামাজের অন্য সব শর্ত, আদাব ও নিয়মাবলি রক্ষা করে। তাফসিরে কুরতুবি

এই সাতটি বৈশিষ্ট্য যারা লাভ করবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউসের সুসংবাদ। মহান আল্লাহ আমাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জন করার তওফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION